অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জয়ের পর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মাঠে নামতে যাচ্ছে ভারত। করোনার কারণে দীর্ঘ বিরতির পর ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়েই নিজ মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাচ্ছে ভারত। শুক্রবার শুরু হওয়া ম্যাচে ভারতীয় দলের নেতৃত্বে ফিরেছেন প্রথম সন্তানের পিতৃত্বের স্বাদ পাওয়া বিরাট কোহলি।
গত মাসে কন্যা শিশুর পিতা হওয়া কোহলি পিতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করার কারণে অস্ট্রেলিয়া সফরে এক টেস্ট খেলেই দেশে ফিরে এসেছেন। আজিঙ্কা রাহানের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে তিনি যখন অস্ট্রেলিয়া ছাড়ছিলেন তখন সিরিজে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছির ভারত। তবে শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ নিশ্চিত করে ইনজুরির কবলে পড়া ভারতীয় দল।
এখন তাদের পরবর্তি মিশন জো রুটের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। ইতোমধ্যে করোনা পরবর্তী এ্যাওয়ে সিরিজে শ্রীলংকাকে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে জয়ের ধারায় রয়েছে ইংল্যান্ড।
তবে স্পিন সহায়ক ঘরের মাটিতে ফেভারিট হিসেবেই সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে ভারত। ২০১২ সালের পর ভারতের মাটিতে কোন টেস্টেই জয় পায়নি ইংল্যান্ড। ভারতের লক্ষ্য নতুন শুরু হওয়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল। ইতোমধ্যেই চলতি বছর জুনে ইংল্যান্ডের লর্ডসে অনুষ্ঠেয় ফাইনালে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
এই মুহুর্তে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারত। তালিকায় এর পরেই অবস্থান করছে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। করোনা ভাইরাসের কারণে অস্ট্রেলিয়া তাদের দক্ষিন আফ্রিকা সফরসুচি বাতিল করায় আসরের ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় বø্যাকক্যাপদের।
ব্রিসবেনের গাব্বায় ভারতকে সিরিজ পাইয়ে দেয়া দলে নতুন তারকা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছেন ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ সিরাজ ও উইকেট রক্ষক-ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থ। ১৯৮৮ সালের পর টেস্ট ক্রিকেটে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মত হেরেছে গাব্বার মাটিতে।
ইনজুরির কারণে ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে খেলতে পারছেননা পেসার মোহাম্মদ সামি ও বাঁ হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জদেজা। তবে ভারতের বৈচিত্র্যপুর্ন আক্রমন সম্পর্কে বেশ ভালভাবেই অবগত সফরকারী ইংল্যান্ড। সহকারী কোচ গ্রাহাম থর্প বলেন,‘ শুধু মাত্র স্পিনই ভারতের একমাত্র বোলিং আক্রমন নয়। তাদের পেস আক্রমনও বেশ শক্তিশালী। শুধুমাত্র স্পিনের প্রতি মনোযোগ দিয়ে আমরা বিভ্রান্ত হতে চাই না।’
স্বাগতিক দলের পেস বোলিংয়ের নেতৃত্বে জস্প্রিত ব্যুমরাহ থাকলেও সেখানে থাকছেন সিরাজ, ইশান্ত শর্মা ও শার্দুল ঠাকুর। ভারতীয় পিচে দারুন আক্রমনের ক্ষমতা রয়েছে স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিন, কুলদীপ যাদব, ওয়াশিংটন সুন্দর ও অক্ষর প্যাটেলের।
ইংল্যান্ডও তাদের স্পিন আক্রমন শানিত করার জন্য দলভুক্ত করেছে জ্যাক লিচ, ডম বেস ও করোনা তেকে মুক্তি পাওয়া মঈন আলীকে। করোনার কারণে শ্রীলংকা সিরিজের বাইরে ছিলেন মঈন।
ইংলিশ দলের রিজার্ভ তালিকায় আছেন তিন স্পিনার ম্যাসন ক্রেন, ম্যাথিউ পার্কিনসন ও অমর ভির্ডি। শ্রীলংকা সফরে দুই সিরিজে দলের হয়ে যথাক্রমে ২২৮ ও ১৮৬ রান করেছেন রুট। যা সিরিজ জয়ে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রেখেছে। শুধু তাই নয় ভারত সিরিজে প্রথম ম্যাচে অংশগ্রহনের মাধ্যমে শততম টেস্ট খেলতে নামবেন ইংলিশ অধিনায়ক। বেন স্টোকস, জোফরা আর্চার ও ররি বার্নসের প্রত্যাবর্তনও সফরকারী দলটিকে অনুপ্রানীত করছে। সময় বাঁচানোর জন্য ‘জৈব সুরক্ষা বলয়ে’ রোটেশন পদ্ধতিতে খেলবেন তারা।
প্রথম টেস্ট শেষে দেশে ফিরে যাবেন উইকেট রক্ষক জস বাটলার। অপরদিকে প্রথম দুই ম্যাচে বিশ্রামে থাকবেন জনি বারিস্টো।
ভারতীয় স্পিনার কুলদীপ যাদব ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে বলেন,‘ রুটের স্টোক খেলার অভ্যাস রয়েছে। ব্যাকফুটে গিয়ে স্পিন খেলারও অভ্যাস রয়েছে তার। বাটলারও বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারেন। এটিই তার দক্ষতা। স্টোকও একই, তিনি বোলারদের চাপে রাখতে পারেন।’
চেন্নাইয়ে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে দর্শকশুন্য স্টেডিয়ামে। তবে একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় টেস্টে আসন সংখ্যার অর্ধেক অর্থাৎ ১৬,৫০০ জন দর্শক প্রবেশ করতে পারবে। সিরিজের তৃতীয় টেস্টটি দিবারত্রির। এটি অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট ভেন্যু আহমেদাবাদের সনদার প্যাটেল স্টেডিয়ামে। যেখানকার দর্শক ধারণ ক্ষমতা ১১০,০০০। চুতুর্থ টেস্ট ম্যাচও একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। এ সিরিজ দিয়েই অভিষেক হত যাচ্ছে ভেন্যুটির।
এই মুহুর্তে ভারত হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম করোনা সংক্রমনকারী দেশ। দেশটিতে এ পর্যন্ত ১০.৭ মিলিয়নেরও বেশী করোনা কেস রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সেখানে করোনায় মৃত্যুর হার নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে।